প্রায় সাত শতকের ঐতিহ‍্যবাহী মা আদ‍্যাশক্তির আরাধনা লালমাটিতে

17th September 2021 10:16 am বাঁকুড়া
প্রায় সাত শতকের ঐতিহ‍্যবাহী মা আদ‍্যাশক্তির আরাধনা লালমাটিতে


দেবব্রত মন্ডল ( বাঁকুড়া ) : দিল্লীতে তখন মোঘল আগ্রাসন, আর এই মোঘলদের পৃষ্টপোষকতা নিয়ে মল্লগড় অর্থাৎ লালামাটির বিষ্ণুপুরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মল্ল রাজারা। শুধু শাষনভারেই নিবদ্ধ থাকাই নয় অনেক সাস্কৃতিক দিকের সাথে সাথে দেবদেবীর পূজোকে নিয়ে ওয়াকিবহাল ছিল মল্লশক্তি।তারই এক স্মৃতি জড়িয়ে আদ্যা শক্তি মা মহামায়া পুজোয়,  রোমহর্ষক সেই ইতিহাস শুনুন ।

আজ থেকে আনুমানিক ৬০০ - ৭০০  বছর পূর্বের ঘটনা কথিত আছে বাঁকুড়া জেলার বড়জোড়া ব্লকের সাহারজোড়া গ্রাম। এক প্রত্যন্ত চাষী একদা নিজের জমিতে লাঙল দিয়ে চাষাবাদ করছিলেন ঠিক তখনই লাঙল চাপে মাটির তলা থেকে একটি শিলা পাথর বেরিয়ে আসে। লাঙলের আঘাতে শিলা পাথরের গা দিয়ে বেরিয়ে আসছিল রক্ত, গোটা জমি রক্তে ভেসে গেলে সেই কৃষক রক্ত দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ঘটনার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি গ্রামবাসীরা ছুটে যান ঐ স্থানে এরপর খবর পাঠানো হয় তৎকালীন বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজার কাছে। তৎকালীন মল্ল রাজা ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন এবং সেই দিনে দুপুরবেলায় রাজাকে স্বপ্নাদেশে মা মহামায়া তার প্রস্তরখন্ড কে পুজো দিতে বলেন। তৎকালীন রাজা ও গ্রামবাসীদের দ্বারা শুরু হয় সাহারজোড়া গ্রামে আদ্যা শক্তি মা মহামায়ার পুজো।বেশ কয়েক বছর পূর্বে তৎকালীন মল্ল রাজা ওই স্থানে মূর্তি পুজো করতে গেলে পূজার তিন দিনের জন্য নিজে থেকেই মন্দিরের গেট বন্ধ হয়ে যায় , পুনরায় মা স্বপ্নাদেশ দেন ওই গ্রামে কোন দেবীর মূর্তি পূজা করা চলবে না মায়ের প্রস্তরখন্ড এবং অন্যান্য দেবীদের ঘটেই পুজো সারতে হবে , মায়ের নির্দেশে আজও সাহারজোড়া গ্রামে কোন দেবীর মূর্তি পূজা হয়না । এর বেশ কয়েক শতক পেরিয়ে যাবার পরে তৎকালীন মল্ল রাজারা সাহারজোড়া এলাকার জমিদারি তালুক বিক্রি করে দেন আসানসোলের বেলভুই জমিদারদের কাছে কিন্তু মহামায়া মন্দিরটি পূজার্চনা করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় গ্রামবাসীকে। সেই পুরনো রীতি নীতি মেনে আজও গ্রামে ওই শিলাখণ্ড কে মা মহামায়া রূপে পুজো করে আসছে গ্রামবাসীরা ।

ইতিহাস যায় হোক না আশ্বিনের শারদপ্রাতে নীল আকাশে পেঁজা তুলো আর কাশকে সাক্ষীরেখে আদ্যা শক্তি মহামায় আবার পূজিত হবার জন্য মর্ত্য লোকে আসতে চলেছেন। আবার ঠাকুর দালানে ১০৮ ভোগের থালা পড়বে, আবার ঠাকুর মশাইের মুখ মন্ত্র পড়ে লাল হবে, আবার আপামোর বাঙালী শারদীয়ার নেশায় মাতবে। তবে হ্যাঁ এবারের পূজোটাও শাস্ত্র বিধির পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোক।





Others News

মল্লরাজ ভূমিতে তোপধ্বনিতে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ : পুজো ঘিরে উন্মাদনা

মল্লরাজ ভূমিতে তোপধ্বনিতে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ : পুজো ঘিরে উন্মাদনা


দেবব্রত মন্ডল ( বাঁকুড়া ) : তোপধ্বনি তে কেঁপে উঠল বিষ্ণুপুর । শুরু হল মল্ল রাজাদের ১০২৫ বছরের অষ্টমী পূজোর সন্ধিক্ষণ।

প্রাচীণ ঐতিহ্য ও পরম্পরা মেনে আজও নিষ্ঠাভরে বিষ্ণুপুর রাজ বাড়িতে দেবী দুর্গা 'মৃন্ময়ী নামে পূজিতা হন। জানা গিয়েছে, পূর্ব প্রথা মতোই প্রাচীণ রীতি মেনে মহাষ্টমীর সন্ধিক্ষণে কামান দাগার মধ্য দিয়ে বিষ্ণুপুর রাজ বাড়িতে শুরু হয়ে গেল 'বড় ঠাকরুনে'র পুজো। তবে এবার করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দর্শক সাধারণের উপস্থিতি ছিল বাঁধভাঙ্গা। সরকারী নিয়মকে মান্যতা দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয়েছে দেবী বন্দনা। এমনকি এখানে কামান দাগার পর্বেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরে অল্প সংখ্যক লোককে নিয়ে ঐ কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে।

শুরুর সময় থেকে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ ঘোষণা করা হয় বড় কামানের গর্জনের শব্দে। যার আওয়াজে রাজবাড়িতে আরতি নৃত্যও শুরু হয়ে যায়।